
চীনের পণ্যের আমদানি রুখতে কঠোর অবস্থানে ভিয়েতনাম
Progga News Desk:
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের বাড়তি চাপ এড়াতে চীনের পণ্য ভিয়েতনাম হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ ছিল। তবে তা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। একই সঙ্গে চীনে যাওয়া স্পর্শকাতর পণ্যের রপ্তানিতেও কড়াকড়ি বাড়াবে দেশটি। দেশটির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ও সরকারি নথি থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সম্প্রতি এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মেড ইন ভিয়েতনাম ট্যাগ লাগিয়ে চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে, যাতে চীনের পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি পাল্টা শুল্ক এড়াতে পারে চীন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভিয়েতনাম ট্রাম্প প্রশাসনের মন গলাতে বিভিন্ন প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে আপাতত ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা শুল্ক কমানো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত বুধবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে ভিয়েতনামের উপপ্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়।
রয়টার্সকে ভিয়েতনামের সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তি জানিয়েছেন, রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনাম চায় এই শুল্ক ২২-২৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে। মার্চে দুই দেশের এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারাও এ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে তাঁরা জানান।
এ বিষয়ে ভিয়েতনামের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কাছ থেকে রয়টার্স বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেয় ভিয়েতনাম। সে সময় দেশটির সরকার ‘বাণিজ্য জালিয়াতি’ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানায়। তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি অনুসরণ করছে। ভিয়েতনামে কারখানা স্থাপন করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
একদিকে ভিয়েতনামের প্রধান রপ্তানির বাজার ও অন্যতম নিরাপত্তা সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র। তাই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক অটুট রাখতে চায় ভিয়েতনাম। অন্যদিকে চীন ভিয়েতনামের অন্যতম বড় বিনিয়োগকারী ও প্রতিবেশী। দুই দেশের মধ্যে আবার দক্ষিণ চীন সাগরে সীমান্ত বিষয়ে সংঘাত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম কিছুটা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
চীনা উপাদানভিত্তিক পণ্য রপ্তানির ফলে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে। একই সঙ্গে চীন থেকে আমদানিও বেড়েছে দেশটির। অনেক ক্ষেত্রেই এসব পণ্য ভিয়েতনামে হালকা প্রক্রিয়াকরণ শেষে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ ট্যাগে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, প্রকৃত কোনো মূল্য সংযোজন না করে ভিয়েতনামকে শুধু ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, চীন ভিয়েতনামের মাধ্যমে শুল্ক এড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও এ নিয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেননি তিনি।
৪ এপ্রিল ভিয়েতনামের একটি জরুরি বৈঠকে বাণিজ্য ও শুল্ক কর্মকর্তাদের দুই সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। তবে চীনকে উসকে না দিয়ে বিষয়টি সামলাতে চাইছে ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে যাওয়া সংবেদনশীল পণ্য, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ও স্যাটেলাইট যন্ত্রাংশের ওপর নজরদারি বাড়াতে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। এ–সংক্রান্ত এক খসড়া আদেশে বলা হয়েছে, বেসামরিক ও সামরিক কাজে ব্যবহৃত বা দ্বৈত ব্যবহার্য পণ্যের রপ্তানিতে নতুন নিয়ম ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া চালু হবে। যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই তালিকায় রয়েছে—চিপ, স্যাটেলাইট, বিমানের যন্ত্রাংশ, যা বেসামরিক ও সামরিক—উভয় কাজেই ব্যবহার হতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে ভিয়েতনাম ইলন মাস্কের স্টারলিংককে অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি ভিয়েতনামের এয়ারলাইনসগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঋণে বোয়িং বিমান কেনার ঘোষণাও দিয়েছে।
অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রপ্রতি সি চিন পিং আগামী সপ্তাহে ভিয়েতনাম সফরে আসছেন। তাঁর সফরের সময়ই ভিয়েতনামের বেসামরিক বিমান সংস্থা চীনের তৈরি কম্যাক বিমানকে ছাড়পত্র দিতে পারে। একদিকে চীনের জেট, অন্যদিকে বোয়িং—দুই পক্ষের সঙ্গেই ভারসাম্য রেখে এগোচ্ছে ভিয়েতনাম, এমনটাই বলা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।